সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক ও আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, এফসিএমএ
প্রশ্ন: বাজার মন্দার কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপনি কি একমত?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: যারা ডে-ট্রেডার তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, হচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়। এ সময়ে তাদের হাতে থাকা শেয়ার ভয়ে বিক্রি করলে লোকসান হতে পারে। বিনিয়োগকারী হিসেবে তাদের তো শেয়ার ধরে রাখার কথা।
প্রশ্ন: টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে নীতিনির্ধারকদের কী ভূমিকা আছে বা কী ভূমিকা নিতে পারে?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: পুঁজিবাজারে দৈনন্দিন যেসব ট্রেড ভলিউম, শেয়ারদরের ওঠানামা, লিকুইডিটি প্রভৃতি আগের তুলনায় সহনীয় সীমারেখার মধ্যে থাকে, তাকে টেকসই পুঁজিবাজার বলা যেতে পারে। ভালো-মন্দ সব শেয়ারের দর বাড়লে বা কমলে তা বাজারে টেকসই হওয়ার লক্ষণ নয়। এছাড়া লিকুইডিটি না থাকলেও সেটা টেকসই হওয়ার লক্ষণ নয়।
প্রশ্ন: নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর নতুন সুশাসন নীতিমালার ড্রাফ্ট প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত আহ্বান করেছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: এটি একটি ভালো উদ্যোগ। স্টকহোল্ডারদের উচিত এ ব্যাপারে তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরা। আমি মনে করি, আগেকার সুশাসন নীতিমালায় রেগুলেটরকে অনেকটা ফেসিলিটেটরের আসনে দেখা গেছে। ড্রাফ্ট নীতিমালা রেগুলেটরকে অধিকতর রেগুলেটরের ভূমিকায় নিয়ে গেছে বলে মনে হয়। উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ড্রাফ্ট নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইনট্রিম ডিভিডেন্ড দিতে গেলে অ্যাকাউন্ট অডিট করাতে হবে। সাধারণত ভালো কোম্পানি বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানি ইনট্রিম ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে। অতীতে সব ক্ষেত্রে ফাইনাল ডিভিডেন্ড ইনট্রিম ডিভিডেন্ড থেকে বেশি দিয়েছিল। এ অবস্থায় অডিটের বিষয়টি অহেতুক খবরদারি বলে মনে হয়। খরচের বিষয়টিও ভাবতে হবে। ড্রাফ্ট নীতিমালায় একজন ফিমেল ডিরেক্টর রাখার কথা বলা হয়েছে। ইন্ডিপেনডেন্ড ডিরেক্টর হতে গেলে যেসব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কথা বলা হয়েছে, সে মাপের দুইশ থেকে তিনশ ফিমেল ডিরেক্টর পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচনে উদ্যোক্তাদের বিশ্বাসের জায়গাটুকুতে হাত দেওয়া হয়েছে। তাদের পূর্বপরিচিত ও আস্থাভাজন অভিজ্ঞ এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনামধারীদের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ড্রাফ্ট নীতিমালা প্রয়োগ করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হলে, যে উদ্দেশ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে সে উদ্দেশ্য সাধিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
প্রশ্ন: বর্তমানে যেভাবে Price Sensitive Information পত্রিকায় ছাপা হয় সেটি কি সন্তোষজনক?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: একে আরও মিনিংফুল করা যায়। বর্তমানে ইপিএস, নেট অপারেটিং ক্যাশ-ফ্লো, এনএভি প্রভৃতি দেখানো হয়। এর সঙ্গে রেভিনিউ পরিমাণ কী তা উল্লেখ থাকলে বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়ন করতে সুবিধা হবে। কত বিক্রি করে প্রদত্ত ইপিএস হয়েছে তা জানা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সন্তোষজনক কি না?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: ১৫টি কোম্পানির রোড শো হয়েছে। এর মধ্যে একটি কাট অফ প্রাইস নির্ধারণের অনুমতি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন বলে মনে করছে। দ্বিতীয়ত, কাট অফ প্রাইস নির্ধারণের পদ্ধতিও ত্রুটিপূর্ণ। এখানকার চালু করা পদ্ধতিতে কেউ চাইলে আঁতাত করে তার কাক্সিক্ষত কাট অফ প্রাইস নিয়ে নিতে পারে। আমরা মনে করি, মোট বিড দিয়ে গড় করে কাট অফ প্রাইস নির্ধারণ করলে ম্যানিপিউলেট করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: বর্তমানে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম আপনি কীভাবেদেখছেন?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: এযাবৎ নিরাপদ পুঁজিবাজারের জন্য যতগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা একটি সর্ববৃহৎ মাইলফলক। যদিও ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। ইতোমধ্যে বিএসইসি বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
প্রশ্ন: BICM–এর কার্যক্রম সম্বন্ধে আপনার মন্তব্য কী?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: BICM ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরা পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন মেয়াদে সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করছে। BICM নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনা খরচে প্রতি সপ্তাহে এক দিনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য যা খুবই উপকারী। দুঃখের বিষয় দীর্ঘ সাত বছর পরও এদের কার্যক্রম শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ। আমি মনে করি, এরা অনলাইন ও অফলাইন উভয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে কার্যক্রম চালু করতে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেটের ব্যাপারে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সূত্র: শেয়ার বিজ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
‘ডিপির মাধ্যমে লভ্যাংশ পরিশোধ করলে বিনিয়োগকারীর দুর্ভোগ লাঘব হবে’ https://corporatesangbad.com/134325/ |