কর্মব্যস্ত জীবনে ভ্রমণের সুযোগ হয় কমই। যদিওবা সুযোগ মেলে, সাধ ও সাধ্যের মধ্যে থেকে যায় দুস্তর ফারাক। ভ্রমণের স্থান নির্বাচন, হোটেল বুকিং, থাকা-খাওয়াসহ থাকে নানা ঝক্কি। এসব ঝক্কি সামলে ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপদ ভ্রমণের সুবিধা দিতে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ট্রিপজিপ ডটট্যুর’। ২০১৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে এরই মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বিনিয়োগ পেয়েছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত জানিয়েছেন ট্রিপজিপ ডটট্যুরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কানিজ ফাতিমা।
ট্রিপজিপ কী ধরনের সেবা দিচ্ছে?
ট্রিপজিপ ডটট্যুর ভ্রমণের জন্য যেসব সেবা প্রয়োজন, তার সব একই প্লাটফর্মে দিচ্ছে। অর্থাৎ ভ্রমণের জন্য ট্রান্সপোর্টেশন, টিকিট ক্রয়, থাকার ব্যবস্থা, গন্তব্যে পৌঁছানোর পর কোথায় খাবেন, তার সব সেবা মিলবে এখানে। কেউ ভ্রমণে গিয়ে শুধু থাকার সেবা চাইলে আমরা সে ব্যবস্থাও করি। বিদেশীরা ট্যুরিস্ট গাইড চাইলে সেটাও সরবরাহ করা হয়। ট্রিপজিপ ডটট্যুরে ভ্রমণ নিয়ে ব্লগিং করার সুবিধা রয়েছে। একজন গ্রাহক একটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে এসে আমাদের প্লাটফর্মে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন।
ট্রিপজিপের মতো একটি চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী হলেন কেন?
ছাত্রাবস্থায় জাতিসংঘের ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করার কারণে প্রচুর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকেই ভ্রমণ এক সময় নেশা হয়ে ওঠে। বিশ্বের যেখানেই গিয়েছি, ভ্রমণ পরিকল্পনা নিজেই করেছি এবং তা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। বাংলাদেশে ওই জিনিসটার খুব অভাববোধ করতাম। ভ্রমণ-সংক্রান্ত সব তথ্য একসঙ্গে পাওয়ার কোনো সুযোগ এখানে নেই। মূলত এ চিন্তা থেকেই ট্রিপজিপের জন্ম, যেন যে কেউ বাংলাদেশের ভ্রমণ-সংক্রান্ত সব তথ্য একসঙ্গে একটি প্লাটফর্মে পায়। ট্রিপজিপ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে একমাত্র স্টার্টআপ, যা কোনো নারী উদ্যোগ নিয়েছে।
কিছুটা চ্যালেঞ্জিং এ শিল্পে হাতেগোনা যে কয়জন নারী উদ্যোক্তা আছেন, তার মধ্যে ট্রিপজিপ একেবারে নতুন এবং ভিন্ন কিছু সেবা নিয়ে কাজ করার কারণে শুরুতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
ট্রিপজিপের কর্মী সংখ্যা কত এবং গ্রাহক সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
ট্রিপজিপের কার্যক্রম তিনজন মিলে শুরু করেছিলাম। বর্তমানে ফুল টাইম ও পার্ট টাইম মিলে মোট ১২ জন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর বাইরে আমাদের কিছু চুক্তিভিত্তিক কর্মী রয়েছে। ট্রিপজিপের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। তবে আমরা ভালো গ্রাহক সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে, করপোরেট হাউজগুলো থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
হোটেল বুকিং ও ট্রাভেল প্যাকেজ ছাড়া আর কী ধরনের সেবা দিচ্ছেন?
ট্রিপজিপ হোটেল বুকিং ও ট্রাভেল প্যাকেজ সেবার পাশাপাশি এক্সক্লুসিভ কিছু আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে। এর আওতায় নারী ও শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে শিশুদের ভ্রমণ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। আমরা শিশুদের নিয়ে এরই মধ্যে কয়েকটি ট্যুর করেছি। ক্যাম্পেইনিংয়ের মাধ্যমে নারীদের ভ্রমণে উৎসাহদানে কাজ করছি।
ট্রিপজিপ কি দেশের বাইরে ভ্রমণসেবা দিচ্ছে?
হ্যাঁ, আমরা দেশের বাইরেও ভ্রমণসেবা দিচ্ছি। দেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য হোটেলের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। বর্তমানে এশিয়ায় আমরা ১৩টি দেশে ভ্রমণসেবা দিচ্ছি। ইউরোপ অঞ্চলে চলতি বছর থেকে কার্যক্রম শুরু করব। এ নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন হোটেল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে।
গ্রাহক নিরাপত্তার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে?
ট্রিপজিপ নারী ট্রাভেলারদের নিয়ে কাজ করছে। কাজেই নিরাপত্তার বিষয়টিতে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা ‘সলো উইমেন ট্রিপ’ নামে ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইল ও কুমিল্লায় ‘ডে ট্রিপ’ পরিচালনা করছি এবং কিডসদের নিয়ে সাফারি পার্কে ট্রিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। টাঙ্গাইলে যখন প্রথম সলো উইমেন ট্রিপ চালু করা হলো, তখন প্রথমে আমার মনে হয়, নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে কী করা যাবে। নিরাপত্তার জন্য প্রথমে আমরা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কাছে সহায়তা চাই। এরপর ট্যুরিজম বোর্ডকে নিয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে যাই। পরবর্তীতে ট্যুরিজম বোর্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভাগের সঙ্গে আমরা একটি চুক্তি করি। এ দুই বিভাগ আমরা যেখানে ট্যুরিস্ট নিয়ে যাচ্ছি, সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে নিরাপত্তাসেবা দিচ্ছে।
ট্রিপজিপ নারী ক্ষমতায়নে অবদান রাখতে পারছে বলে মনে করেন?
বিষয়টিকে আমি দুইভাগে ভাগ করে বলতে চাই। প্রথমত. আমি একজন নারী উদ্যোক্তা। পড়াশোনা শেষ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি খাতে কাজ শুরু করেছি এবং সফলতার সঙ্গে এগোচ্ছি। দ্বিতীয়ত. নারীদের নিয়ে আমাদের ক্যাম্পেইনগুলোয় বিভিন্ন অজ্ঞতার বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়। আমি মনে করি, ট্রিপজিপ নারী ক্ষমতায়নে অবশ্যই অবদান রাখছে।
ভ্রমণসেবা প্রদানে কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়?
বাংলাদেশে নারীরা নিজেরা দলবদ্ধ হয়ে ভ্রমণে যেতে পারে, এটাই তো একটি বড় বাধা। ট্রিপজিপ তো একটি প্লাটফর্ম। এর আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। নারীদের ভ্রমণসংক্রান্ত উদ্যোগগুলো প্রথম দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ট্রিপজিপ যেহেতু নতুন প্রজন্মকে কেন্দ্র করে, সেভাবে তাদের সব আয়োজন বা সেবা পরিকল্পনা করে। কাজেই অনেক ক্ষেত্রে আমাদের গতানুগতিক ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে কাজ করতে হয়। নতুন নতুন আইডিয়া আবার প্রথাগতভাবে যারা কাজ করেন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল স্বাগত জানাতে কিছুটা দ্বিধাবোধ করেন।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প কতটুকু সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন?
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অবশ্যই সম্ভাবনাময়। কিন্তু এ শিল্পকে বহিঃর্বিশ্বে তুলে ধরতে প্রমোশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে ইউটিউবে অনুসন্ধান করেন, ভালো কোনো কনটেন্ট নেই। বাইরের একজন পর্যটক যে বাংলাদেশে ঘুরতে আসবে, তার তো একটা কারণ থাকতে হবে। আমাদের পর্যটন শিল্প নিয়ে কোনো ব্লগ নেই। বাইরের দেশে আমরা কোনটিকে তুলে ধরব? পর্যটন শিল্পের ওপর সামগ্রিকভাবে কোনো গবেষণা ও জরিপ নেই। এসবের সমন্বয়ে বাংলাদেশের পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে বাধ্য।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ‘উদয়ন’ প্রকল্প কতটুকু সহায়তা দিতে পেরেছে?
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদয়ন প্রকল্পটি একটি চমৎকার উদ্যোগ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য। তরুণদের উদ্যোগকে সাধারণত কোনো ব্যাংক এখন স্বাগত জানায় না। খুব ভালো আইডিয়া হলে তার জন্য আমাদের বিদেশী ফান্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রে মার্কেন্টাইল ব্যাংক তরুণ উদ্যোগকে স্বাগত জানানোয় অনেকে ভালো উদ্যোগ নিতে সাহস পাবেন।
সৌজন্যে: বণিক বার্তা
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
নারীদের ভ্রমণে উৎসাহিত করছে ট্রিপজিপ: কানিজ ফাতিমা https://corporatesangbad.com/132376/ |