নিউ ইয়র্কে জালালাবাদ অ্যাসোসিশনের সম্পাদক বহিস্কার, ২ জনকে নোটিশ

Posted on February 15, 2023

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জালালাবাদ অ্যাসোসিশনের সাড়ে তিন কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ সাধারন সম্পাদক মঈনুল ইসলামকে বহিস্কার করা হয়েছে। সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তারা যোগসাজস করে কমিটির অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংক থেকে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮ শত ৬ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৬ টাকা) উত্তোলন করে নিজের ইচ্ছেমত খরচ করেন যা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী।

স্থানীয় সময় রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসের একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ড ও কার্যকরি কমিটির যৌথ সভায় সাধারন সম্পাদকের বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

নিউ ইয়র্কে জালালাবাদ অ্যাসোসিশনের উক্ত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কৈফিয়তের নোটিসপ্রাপ্ত বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলামকে গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৬ ধারা ৭ (ক), অনুচ্ছেদ ৯ (গ) ও (ঘ), অনুচ্ছেদ ১৬ (৬) ধারার সুস্পষ্ট লংঘনের দায়ে তাকে সংগঠন বিরোধী কর্মক্রমের দায়ে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়। একই সঙ্গে সহ-সাধারন সম্পাদক রোকন হাকিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

রোববার উক্ত সভায় সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজকে গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদর একই ধারার সুস্পষ্ট লংঘন এবং সংগঠন বিরোধী কার্যক্রম ও সংগঠনের অর্থ লোপাটের দায়ে তাদেরকে আজীবন সদস্য পদ কেন বাতিল করা হবে না? এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এছাড়াও নতুন কার্যকরী কমিটির উপরে রেখে যাওয়া বিদায়ী কমিটির নিউ জার্সিস্থ কবরস্থানের মর্গেজ পেমেন্ট আগামীতে জালালাবাদ বাসির স্বার্থে কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং কার্যকরী কমিটির কাছ থেকে অর্থ আদায় করে আগামীতে পেমেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সংগঠনের সভাপতি বদরুল খানের সভাপতিত্বে এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অফ ট্রাস্টি অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বদরুন নাহার খান মিতা, ছদরুন নূর, কওছারুজ্জামান কয়েছ, সংগঠনের সহ-সভাপতি সফিউদ্দিন তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলিম, প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক ফয়সাল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক মান্না মুনতাসির, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হোসেন আহমেদ, আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জাহিদ আহমেদ খান, কার্যকরী সদস্য শামীম আহমদ ও মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন মানিক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, কারণ দর্শাও নোটিসপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলাম জালালাবাদ ইউএসএ ইনক নামের একটি করপোরেশন গঠন করে নিজে একটি বাড়ি কেনেন। এ বাড়ি ক্রয়কালে মইনুল সংগঠনের একাউন্ট থেকে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮ শত ৬ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৬ টাকা) গোপনে সরিয়ে নিয়েছেন। সংগঠনের তহবিল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে অসাংবিধানিক ও অগঠনতান্ত্রিক কাজ তিনি করেছেন।

২০২০ সালে মইনুল সংগঠনের তহবিল থেকে আড়াই লাখ ডলার এম এ আজিজের ‘কোর কনস্ট্রাকশন গ্রুপের’ একাউন্টে ট্রান্সফার করেছিলেন। এম এ আজিজকে কমিউনিটির লোকজন চেনেন। অথচ সংগঠনের সংবিধানে রয়েছে ৫ হাজার ডলারের বেশি তহবিল থেকে তুলতে হলে কার্যকরি কমিটিসহ ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমতি লাগে। মইনুলের এইসব অসাংগঠনিক কাজের অংশীদার সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল ও মিজানুর রহমান শেফাজ। তবে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮ শত ৬ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৬ টাকা) লোপাটের নাটের গুরু সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। কয়েক বছর আগে তিনি কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর দুই বছর মেয়াদী সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সংবিধান লংঘন করে অনৈতিকভাবে সাড়ে তিন বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনের আগে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বাক পরিচালনার কথা বললেও তার সময়েই বাক ভেঙ্গে ৬ ভাগে বিভক্ত হয়ে ৬টি আঞ্চলিক সংগঠনের জন্ম হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহামারি করোনাকালীন সময়ে তিনি বাক-এর কতিপয় সদস্যদের সাথে নিয়ে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের নামের নানা ধরনের নাটক করেন। দোকান থেকে ত্রাণের মালামাল কিনে মানুষের মাঝে বিতরণের ছবি তুলে পরে তা দোকানে ফেরত দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সাবেক গণসংযোগ সম্পাদক একেএম মেজবাহ উদ্দিন। তার এহেন কর্মকান্ডের খবর দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেলে ব্যাপক সাড়া পড়ে।