নারায়ণগঞ্জে ফুটপাত হকার মুক্ত করতে যেয়ে স্থানীয় সাংসদের ক্যাডারদের হামলামুখে পড়েছেন মেয়র আইভি। হামলায় তিনিও আক্রান্ত হয়েছেন। সাংসদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ফুটপাত হকারমুক্ত করা যাবে না। নারায়ণগঞ্জের সাংসদ এবং মেয়র দু’জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট।
একই ঘটনা দেখা গিয়েছিল ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় মেয়র হকারমুক্ত করতে গেলে। এখানেও ক্ষমতাসীন দলের একাংশ তা প্রতিহত করতে দাঁড়িয়ে যায়। ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ উভয় ক্ষেত্রে অগ্নেয়াস্ত্রের প্রদর্শন হয়েছে এবং ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে একটা প্রেসব্রিফিং দেয়া দরকার। যে ক্ষমতাসীন দল ফুটপাত হকারমুক্ত করতে চান, না চান না। একই ইস্যুতে একই দলের লোকেরা হানাহানিতে লিপ্ত হবে, সেটা মোটেই সমীচীন নয়। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকেও দিকনির্দেশনা দরকার।
এটা বোধকরি কেউ অস্বীকার করবেন না যে, ফুটপাত জনগণের হাঁটার জন্য। দেশের কোন আইন বা পৃথিবীর কোন আইন ফুটপাতে হকার বসাকে সমর্থন করে না। কিন্তু তারপরও অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে ফুটপাতে হকার বসে থাকেন। তবে অন্যান্য দেশে হকাররা জনগণের চলাচলের জায়গা রেখে বসে। কিন্তু বাংলাদেশের হাকররা এমনভাবে বসে যে পথচারিরা রাস্তা দিয়ে চলতে পারে না। ভাবখানা এমন যেনো ফুটপাত তাদের জন্য বানানো হয়েছে। পথচারি যেতে পারলে যাক, না পারলে রাস্তায় গাড়ির ভেতর দিয়ে যাক। হকারদের এই জবরদস্তিমূলক মনোভাবের কারণ তারা ফুটপাতে বসার জন্য মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে থাকেন। ঢাকায় মেয়র সাঈদ খোকন যখন হকার উচ্ছেদে নেমেছিলেন তখন তার দলের একাংশ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তা প্রতিহত করতে নেমেছিল। কারা হকারদের প্রতি ভালবাসা থেকে নয় হকারদের কাছ থেকে পাওয়া কোটি কোটি টাকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। নারায়ণগঞ্জেও সেরকমটাই হয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয়।
ঢাকায় সাঈদ খোকনের তৎপরতায় ক’দিন রাজধানীবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে ফুটপাতে চলাচল করতে পেরেছিল। কিন্তু ফুটপাত আবার দখল হয়ে গেছে। জানা যায়, শুধু রাজনীতিবিদরা নন, পুলিশও এই টাকার ভাগ পেয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জ ছিল ঢাকার একটা মহকুমা, আশির দশকে জেলা হয়। কিন্তু রাস্তা ঘাট সেই আগের অবস্থায়ই আছে। নগরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু এভিনিউও খুব একটা প্রশস্ত নয়। নগরটি জনবহুল। জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার হকার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান তার অনুগত ক্যাডারদের নিয়ে প্রতিহত করতে নামেন। এতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় একটা পর্যায়ে মেয়র আইভি রাস্তায় পড়ে যান। তার অনুগত কর্মীরা মানব ঢাল তৈরি করে তার জীবন বাঁচান।
বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যে দেশে অনিয়মই নিয়ম। সাংসদরা আইন প্রণয়ন করেন। তারা দেশের সবচে সম্মানীয় জনপ্রতিনিধি। আইন ভাঙতে সাংসদের রাস্তায় নামা এটা বাংলাদেশেই সম্ভব। এটা ঠিক পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে এবং মুক্তিযুদ্ধে ওসমান পরিবারের অনেক অবদান ছিল। তার মানে এই নয় যে তারা একের পর এক আইন ভঙ্গ করে চলবেন। প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজিতো বড় ধরনের অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদ ।
সংবিধানে এমন কোন বিধান লেখা নেই যে, সরকারি দলের লোকেরা অস্ত্র প্রদর্শন করলে ছাড়া পেয়ে যাবেন। আমরা আইভি রহমানকে ধন্যবাদ জানাই তার সাহসী পদক্ষেপের জন্য। সেই সাথে সরকারি দলের উচ্চ পর্যায় থেকে দিক নির্দেশনা আশা করছি, সকল সড়ককে হকারমুক্ত করা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
জনস্বার্থে সকল ফুটপাত হকারমুক্ত করুন https://corporatesangbad.com/129099/ |