ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন আবুল কাশেম খান। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। বিনিয়োগের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জোর দিয়েছেন সংস্কারের ওপর। বলেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হতাশার কথাও।
প্রশ্ন: আপনি ২০১০ সালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ছিলেন। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা নিয়ে কথা বলতেন? সেই সমস্যাগুলোর এখনকার পরিস্থিতি কী?
কাশেম খান: তখন যেসব সমস্যা ছিল, তা এখনো আছে। কিছু সমস্যার সমাধানে দেশ বেশ এগিয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। যানজটের আংশিক সমাধান হয়েছে। অনেক ফ্লাইওভার, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে; এ ক্ষেত্রে খুব বেশি নম্বর দেব না। জাপানের সঙ্গে মাতারবাড়ী প্রকল্প হচ্ছে, চীনা বিনিয়োগ আসছে। করের আওতা বেড়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এখন আপনি যদি চ্যালেঞ্জের কথা বলতে বলেন, আমি কিছু বলতে পারব।
প্রশ্ন: আমি এখনই চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রশ্ন করতাম।
কাশেম খান: এ বছর আমরা সংস্কার নিয়ে কথা বলব। আমরা যে অর্থনীতিতে উন্নীত হচ্ছি, তাতে শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেই হবে না। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে নীতি সংস্কার জরুরি, অবকাঠামো জরুরি। অবকাঠামো বলতে আমি আধুনিক, বহুমুখী ও দক্ষ অবকাঠামোকে বোঝাচ্ছি। এটা শুধু রাস্তাঘাট নির্মাণ নয়। এ ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট, রেল, জলপথ ব্যবহার করে একটি আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; যাতে পরিবহন খরচ কমিয়ে রাখা যায়। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন করা ২০ বছর আগের ধারণা ছিল, সেটা সবে হয়েছে। এখন আট লেন করতে হবে। ব্যবসা করার খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি বলছিলেন ব্যবসা করার খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে কি গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ ও গ্যাস-সংকটকে যুক্ত করবেন?
কাশেম খান: ব্যবসা করার খরচের দিক দিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আমরা একেবারে নিচের দিকে আছি। শিল্পের ব্যবহৃত উপাদানের দাম বাড়লে সেটা শিল্পকে আঘাত করে। সরকার গ্যাসের দাম বাড়াবে বলছে, সে ক্ষেত্রে তাদের নানা যুক্তি থাকবে। আমরা চাই না দাম বাড়ুক। এখন অনেক কারখানা গ্যাস পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে চাপ কম। এর ওপর দাম বাড়ানোর উদ্যোগ বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। আপনি একদিকে বলছেন ব্যাপক শিল্পায়ন হবে, অন্যদিকে অন্যতম উপাদান গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করছেন—শেষ পর্যন্ত ব্যবসা তো লাভজনক থাকতে হবে।
সরকার বলছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আসবে। কিন্তু এ বছর আমরা সরকারকে বলব নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করে সেখানে দ্রুত উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে। এটা হওয়া উচিত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়। একটি-দুটি গ্যাসক্ষেত্র পেয়ে গেলেই ভালো পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ, এলএনজি আসুক, আর যা-ই আসুক, দেশীয় উত্তোলন ছাড়া গ্যাসের দাম নাগালে রাখা যাবে না। আর এখনকার গ্যাস সাত থেকে আট বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। গ্যাসই আমাদের শিল্পায়নের ভিত্তি। দরকার পড়লে আমরা বিদেশে গিয়ে গ্যাসের খনি কিনে নিতে পারি।
প্রশ্ন: একে খান অ্যান্ড কোম্পানি দেশের অন্যতম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আপনারা কি এখন বিনিয়োগে যাচ্ছেন?
কাশেম খান: আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। আর একটি যৌথ বিনিয়োগের কারখানা করছি। সেটা করতে গিয়ে আমাদের দুই বছর বিলম্ব হয়েছে স্থানীয় কারণে।
প্রশ্ন: বিলম্বের কারণ কি রাজনৈতিক পরিস্থিতি?
কাশেম খান: না, তা বলব না। নীতিগত পর্যায়ে সরকারের কাজ খুব দ্রুত হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনের নিচের স্তরে অনেক দেরি হয়েছে। একটি চিঠি অথবা অনুমোদন পেতে অনেক সময় লেগেছে। এতে বিদেশিরা হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। সমাজের একটি পর্যায়ে আমাদের যোগাযোগের সুযোগ আছে। সেখানে আমাদের যদি এভাবে ভুগতে হয়, তাহলে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী বা নতুন উদ্যোক্তার কী অবস্থা হবে?
প্রশ্ন: রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কতটুকু উৎসাহিত হচ্ছে?
কাশেম খান: যদি বাংলাদেশের আগের কথা চিন্তা করেন, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। গতবার আমরা ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছি, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখবেন বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কম পাচ্ছে। ভিয়েতনাম তিন বছরে ছয় হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। তারা স্যামসাংয়ের ৩৫ কোটি ডলার, নেসলের ষষ্ঠ কারখানায় ৭ কোটি ডলার, জিনক্স রিসোর্সের ইস্পাত কারখানায় সাড়ে ১১ কোটি ডলার পেয়েছে। এ ছাড়া এলজির বিরাট বিনিয়োগ তারা পেয়েছে।
জাপান, চীন ও কোরিয়া সেখানে বিনিয়োগ বেশি করছে। বাংলাদেশে কম। আমরা একটা জরিপ করতে পারি, কেন তারা ভিয়েতনাম কিংবা মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশে করতে চাইছে না। বাংলাদেশে এসে তারা হয়তো হতাশ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখানে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসে বিমানবন্দরে নেমেই ভড়কে যান, এ কোথায় এলাম। তারপর যখন রাস্তায় আসছেন, আরও ভয় পেয়ে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন: গত মাসে ঢাকা চেম্বার উন্নত দেশ হতে করণীয় নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছে। আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করি আগামী বছরগুলোতে আপনি সরকারকে কোন তিনটি বিষয়ে জোর দিতে বলবেন, তাহলে আপনি কী উত্তর দেবেন?
কাশেম খান: আমি এক নম্বরে জ্বালানি খাত, দুই নম্বরে অবকাঠামো ও তিন নম্বরে মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে বলব।
প্রশ্ন: আমার শেষ প্রশ্ন। ভারত বাংলাদেশি পাটপণ্যে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে কিছু বলবেন?
কাশেম খান: পাটপণ্যের শুল্ক সবাইকে আঘাত করবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আলোচ্যসূচিতে এটা ঢোকানোর চেষ্টা করব। যেখানে যেখানে যাব, সেখানেই এটি তুলে ধরব। এটা যদি অবাধ বাণিজ্যকে রুখে দিতে করা হয়, তাহলে তা ভুল। ভারত আমাদের অনেক বড় বাণিজ্য অংশীদার। তাদের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করি।
সৌজন্যে: প্রথম আলো
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
আবুল কাশেম খান, সভাপতি, ডিসিসিআই https://corporatesangbad.com/12666/ |