নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এ তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুসাঙ্গিক খাতের অন্তর্ভুক্ত দুই কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এবং মেঘনা পেট ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানি দুটির নেই ওয়েবসাইট, নেই কোম্পানি সেক্রেটারি এবং প্রকাশিত হয়না কোন প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন এবং এজিএম এর নোটিশ ও প্রজ্ঞাপন ।
এক গুচ্ছ অনিয়ম নিয়েই পুঁজিবাজারে লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে কোম্পানি দুটি। কোন প্রকার বার্ষিক প্রতিবেদন এবং বার্ষিক সাধারন সভার আগে নোটিশ প্রকাশ ছাড়াই ২৩ ডিসেম্বর এজিএম করেছে।
২০১৮ সালের ২০ জুন বিএসইসি কর্তৃক ডিসক্লোজার সংক্রান্ত নটিফিকেশনের ৯ এর ১ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে যে, পুঁজিবাজারে বিএসইসির তালিকা ভুক্ত সকল কোম্পানিকে এজিএম এর নূন্যতম ১৪ দিন পূর্বে বাধ্যতামুলক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনের সফ্ট কপি কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের কাছে ই-মেইল এ পৌছাতে হবে।
এবং ৯ এর ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রতিটি কোম্পানিকে এজিএম এর ১৪ দিন আগে বার্ষিক প্রতিবেদন কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশের পাশাপাশি সেই তথ্য নিবন্ধিত দৈনিক বাংলা পত্রিকা, ইংরেজি পত্রিকা এবং দৈনিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করে সাধারন বিনিয়োগকারিদের জানাতে হবে। যার কোনটাই করেনি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এবং মেঘনা পেট ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড।
কোম্পানি দুটির নেই কোন কোম্পানি সেক্রেটারি। ডিএসইর কোম্পানি প্রোফাইলে ওয়েব সাইট লিঙ্ক দেয়া থাকলেও সেগুলো অচল। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২০১৮ সালের ২০ জুন জারি করা ডিসক্লোজার সংক্রান্ত নির্দেশনার ক্লজ নম্বর ৯ (২) অনুযায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন ২০১৫ এর রেগুলেশন ২১ অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওয়েবসাইটে বিস্তারিত আর্থিক বিবরণী ও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
অন্যদিকে, ৩ জুন ২০১৮ সালে জারিকৃত কর্পোরেট গভর্নেন্স কোডের ৮ এর (১) নং ক্লজ এ বলা আছে স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের সাথে কোম্পানির লিঙ্কযুক্ত একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থাকতে হবে। কোম্পানি তালিকাভুক্তির তারিখ থেকে ওয়েবসাইটটিকে কার্যকরী রাখতে হবে। যা এড়িয়ে গেছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এবং মেঘনা পেট ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড।
এ বিষয়ে ডিএসইতে দেয়া কোম্পানিগুলোর টেলিফোন নাম্বরে ফোন দিলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে কোম্পানির কারো সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান অপারেশন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান কর্পোরেট সংবাদকে জানান, “ এ নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা রিপোর্ট করেছি এবং কোম্পানি গুলোকেও অভিহিত করেছি। এবং তাদের বিরুদ্ধে ডিএসইর কার্যক্রম চলমান আছে”। সম্প্রতি ডিএসইর একটি প্রতিনিধিদল কোম্পানি দুটির পরিদর্শনে গেলে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পায়।
দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও মেঘনা পেট কোনো প্রকার ডিভিডেন্ড না দেওয়াসহ এক প্রকার অস্তিত্বহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাই বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের স্বার্থে কোম্পানি দুটিতে পরিদর্শনে যায় ডিএসইর প্রতিনিধি দল। দলটি সরেজমিনে গিয়ে কোম্পানিদুটির ফ্যাক্টরি বন্ধ পায়। প্রতিনিধি দলটি এই বিষয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
শেয়ারবাজারে তালিকা ভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির সকল প্রকার নোটিশ এবং কারখানায় উৎপাদন বন্ধ কিংবা চালুর বিষয় অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এ ধরনের তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ার হোল্ডারদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোম্পানি গুলোর কারখানা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সেই তথ্য ডিএসই কিংবা সাধারন বিনিয়োগকারিদের জানায়নি কোম্পানি দুটো।
২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ১৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানিটিতে পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ১১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
কোম্পানিটির মোট ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ারের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদের কাছে রয়েছে ৫০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৫০ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০০১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া মেঘনা পেটের অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানিটিতে পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট ১ কোটি ২০ লাখ শেয়ারের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদের কাছে রয়েছে ৫০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৫০ শতাংশ।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৬৪ টি স্বল্প মূলধনী কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যাদের মধ্যে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এবং মেঘনা পেট ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডও তালিকাভুক্ত ছিলো।
চিঠিতে বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে থাকতে হলে কোম্পানিগুলোর মূলধন বাড়াতে হবে। অন্যথায় কোম্পানিগুলো মূল বোর্ডে থাকতে পারবে না। বর্তমানে মূল বোর্ডে লেনদেন করার জন্য কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক এর পরিশোধিত মূলধন ১৬ কোটি টাকা এবং মেঘনা পেট ইন্ডাষ্ট্রিজ এর ১২ কোটি টাকা। আগামি এক মাসের মধ্যে কোম্পানি দুটির মূলধন বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।
সবকিছু ধোয়াসা রেখেই পুঁজিবাজারে লেনদেন চলমান রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থা চলতে থাকলে একটা সময় পুঁজি হারাতে পারেন মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ বিনিয়োগকারীরা এমনটাই ধারনা করছেন বিশ্লেষকরা ।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
অনিয়মই নিয়মে দাঁড়িয়েছে মেঘনা পেট ও মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের https://corporatesangbad.com/12023/ |