কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড মানছেনা আরামিটের দুই কোম্পানি

Posted on January 5, 2022

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এ তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানি আরামিট সিমেন্ট লিমিটেড এবং বিবিধ খাতের অন্তর্ভুক্ত আরামিট লিমিটেড। কোম্পানি দুটি কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড অমান্য করেই যাচ্ছে।

বিশেষ পর্যবেক্ষনে জানা গেছে, একই ব্যক্তি একই সাথে দুই কোম্পানির একই পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন। কোম্পানি দুটির চেয়ারম্যান এস এম আলমগীর চৌধুরী। উভয় প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও হিসেবে রুখমিলা জামান এবং কোম্পানি সেক্রেটারি হিসেবে সৈয়দ কামরুজ্জামান দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন।

কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড (৩ জুন ২০১৮) এর ৩ (১) (সি) ধারায় বলা আছে, কোন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা একইসময় অন্য কোন কোম্পানি, প্রতিষ্ঠানে একই পদে বা অন্য কোন পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না।

উক্ত প্রতিষ্ঠানের কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ কামরুজ্জামান আদৌ কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড সম্পর্কে জানেন কিনা সে বিষয়ে সংশয় থেকে যায়।

তিনি বলেন, “আমাদের এমডির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়া আছে”। আর কোম্পানি সেক্রেটারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন কোম্পানি সেক্রেটারি একাধিক কোম্পানিতে একই পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে পারবেন। কিন্তু সিএফও পারবেন না”।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এ বিষয়ে কোন বিধি নিষেধ আমাকে জানায় নি।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মার্কেট অপারেশন বিভাগের প্রধান ওয়াসি আজম কর্পোরেট সংবাদকে বলেন, “গভর্ন্যান্স কোড অনুযায়ি একই ব্যক্তি কখনই একাধিক কোম্পানির কোম্পানি সেক্রেটারি বা একাধিক কোম্পানির এমডি হিসেবে কর্মরত থাকতে পারেন না। আর সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন কখনো এ ধরনের পারমিশন দেয়না”।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মোঃ মিজানুর রহমান, এফসিএস কর্পোরেট সংবাদকে বলেন, শুধু এই দুই কোম্পানি নয়, আরো অনেক কোম্পানি কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড কে তোয়াক্কা না করেই চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম । এ অবস্থার নিরসনে সমাধানের পথ বিএসইসিকেই খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির এমডি একজনই হতে পারবেন, এমন কোন সুযোগ রয়েছে বলে আমার জানা নেই।

আরামিট সিমেন্ট লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কোম্পানিটি করপরবর্তি ২ কোটি ২ লাখ ৬৫ হাজার ২৪১ টাকা মুনাফা অর্জনে স্বার্থক হলেও বিগত ৪ বছর কোন প্রকার মুনাফার সন্ধান পায়নি কোম্পানিটি। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে কোম্পানিটির কর পরবর্তি ক্ষতির পরিমাণ ছিলো ১০ কোটি ৬ লাখ ৬৫ হাজার ২৮৭ টাকা, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ১৭২ টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৮ টাকা, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ১১৯ টাকা লস হয়। এবং সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের অনিরিক্ষিত ১ম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর পরবর্তি ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ৬৪ লাখ ৬ হাজার ৪২৫ টাকা।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কয়েকশত কোটি টাকা ব্যাংক ঋণে ডুবে আছে কোম্পানিটি। চলতি অর্থ বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির মোট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৭২ কোটি ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯৬ টাকা। যা আগের বছর ছিলো ৪২২ কোটি ৬৫ লাখ ৩২ হাজার ৬৯২ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪৯ কোটি ৩৯ লাখ ৮০৪ টাকা।

কোম্পানিটি বিগত চার বছর কোন লভ্যাংশ দেয়নি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি স্পন্সর- পরিচালকদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।

কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার। তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে ৪৭.১৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারি ১২.৮২ শতাংশ, এবং ৪০.০৪ শতাংশ সাধারন বিনিয়োগকারিদের হাতে।

কোম্পানিটির অনিরিক্ষত ১ম প্রান্তিকে (১ম জুলাই২০২১- ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১) প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিটির ১ম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লস (ইপিএস) হয় ১.৯৬ টাকা যা একই সময় আগের বছর লস হয়েছিলো ১.৩২ টাকা। ১ম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ০.১৪ টাকা যা একই সময়ে আগের বছর ছিলে ৩.১৯ টাকা। ১ম, প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু হয়েছে ২৭.১৯ টাকা। যা একই সময় আগের বছর ছিলো ২৯.১৩ টাকা।

আজকে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ০.৫৩ শতাংশ। গতকাল কোম্পানিটির ক্লোজিং প্রাইস ছিলো ৩৭.৬০ টাকা। আজকে কোম্পানিটি ৫১৬ বারে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৪ টি শেয়ার লেনদেন করে । যার বাজার মূল্য ৮০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ওঠানামা করে সর্বনিম্ন ১৪.৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬৪.০০ টাকায়। কোম্পানিটি ১৯৯৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে মার্কেটের জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

অন্যদিকে আরামিট লিমিটেড এর মোট শেয়ার সংখ্যা ৬০ লাখ টি। তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে ৬৩.৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারি ১৪.৯৮ শতাংশ এবং ২১.৪৪ সাধারন বিনিয়োগকারিদের হাতে।

কোম্পানিটির অনিরিক্ষত ১ম প্রান্তিকে (১ম জুলাই২০২১- ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১) প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিটির ১ম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয় ১.১৪ টাকা যা একই সময় আগের বছর ছিলো ০.৬৭ টাকা। ১ম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো কমেছে ৬.৮৩ টাকা যা একই সময়ে আগের বছর কমে ছিলে ৪.৩০ টাকা। ১ম, প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু হয়েছে ১৯২.৫৩ টাকা। যা একই সময় আগের বছর ছিলো ১৮১.৪২ টাকা।

৩০ জুন, ২০২১-এ শেষ হওয়া বছরের জন্য ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে আরামিট লিমিটেড ।

কোম্পানিটি বিগত ৫ বছরে লভ্যাংশ দিয়েছে যথাক্রমে ২০২১ সালে ৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ২০২০ সালে ৫০ শতাংশ ক্যাশ ডেভিডেন্ড, ২০১৯ সালে ৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ২০১৮ সালে ৫০ শতাংশ ক্যাশ ডেভিডেন্ড এবং ২০১৭ সালে ৪৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ।

কোম্পানিটির আজকের শেয়ার দর বেড়েছে ০.০৩ শতাংশ। কোম্পানিটির গতকালের ক্লোজিং প্রাইস ছিলো ৩২০ টাকা। আজকের ওপেনিং প্রাইস ৩২৮ টাকা। কোম্পানিটি ১৯৬ বারে ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৩৬ টি শেয়ার লেনদেন করে । যার বাজার মূল্য ৪২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ওঠানামা করে সর্বনিম্ন ২২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায়। কোম্পানিটি ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে মার্কেটের এ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।