আরিফ হাসান: দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এ তালিকাভুক্ত বিমা খাতের অন্তর্ভুক্ত ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অনিয়মের শেষ নেই। কোম্পানিটি ২০১৮ সালের পর করেনি কোন এজিএম, দেয়নি কোন লভ্যাংশ, প্রকাশ করেনি কোন আর্থিক বিবরনী।
কোম্পানিটির ওয়েবসাইট তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী প্রকাশ ছাড়াই ২০১৯ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর এজিএম করে ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। উল্লেখিত অর্থবছরে কোন লভ্যাংশও দেয়নি কোম্পানিটি। ওয়েবসাইট থাকলেও ২০১৯ সালের ৩য় প্রান্তিক প্রকাশের পর আর কোন আর্থিক বিবরনী প্রকাশিত হয়নি কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে।
কোম্পানিটির প্রকাশিত ২০১৯ সালের ৩য় প্রান্তিকের আর্থিক বিবরনী প্রকাশ করলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়নি ইপিএস, নিট এ্যাসেট ভ্যালু, নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পার শেয়ার এবং কর প্রদান পরবর্তি লস কিংবা মুনাফা সংক্রান্ত কোন তথ্য। এমনকি প্রকাশিত প্রতিবেদনে নেই ডিরেক্টর, সিইও, সিএফও এবং কোম্পানি সেক্রেটারির কোন স্বাক্ষর।
যদিও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম কিংবা অর্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ মূল্যসংবেদনশীল তথ্য। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এ ধরনের তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ারহোল্ডার দের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ না করায় কয়েক বছর ধরে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা ।
এদিকে ৩ বছর ধরে বিনিয়োগ কারিদের ঠকিয়ে আসছে কোম্পানিটি। ৩ বছর কোন প্রকার লভ্যাংশ দেয়নি ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি সর্বশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০১৮ সালে ২৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর ২০২১, কোম্পানির প্রায় ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছিলো মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে গত ৯ ডিসেম্বর ২০২১, মামলা করা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছিলেন ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
তিনি জানান, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ডেল্টা লাইফ টাওয়ার, প্লট-৩৭, রোড-৪৫ (দক্ষিণ) ও ৯০ (উত্তর), গুলশান-২, ঢাকা-১২১২ এ অবস্থিত। ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে একটি দল ডেল্টা লাইফের ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করে। ভ্যাট গোয়েন্দার দল তদন্তের স্বার্থে দলিলাদি দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে তলব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত বার্ষিক সিএ রিপোর্ট, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) ও নানা সময় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
তদন্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ২৬২ টাকা এবং সুদ বাবদ ১৩ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার ৭৯৯ টাকাসহ সর্বমোট ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬১ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।
তদন্তে আরও দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গত ৯ ডিসেম্বর ২০২১, এ-সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বছর ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে পলিসিরি টাকা না দেওয়া, তহবিল বাড়িয়ে দেখানো, ব্যাংক হিসাবের গড়মিল, কোম্পানির আর্থিক রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে মানদন্ড না মানা, এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি সহ ছোট বড় সব মিলিয়ে ৪৭ ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত হয়।
তার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ১০টি অনিয়মকে অধিকতর মনে করে তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছিলো। এ ছাড়াও এসব অনিয়ম ও ব্যর্থতার কারণে প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানের পুনঃনিয়োগের আবেদন বাতিল করেছিলো বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
এতো-এতো অনিয়ম এবং বিনিয়োগকারিদের লভ্যাংশ না দিয়ে ঠকিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি। বছরের পর বছর এজিএম না করেও লভ্যাংশ না দিয়েও মার্কেটের এ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো: মিজানুর রহমান এফসিএস কর্পোরেট সংবাদকে জানিয়েছেন, “শুধু ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নয় অনেক কোম্পানিই নানারকম অনিয়ম করেও পুঁজিবাজার থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঠিক তদারকির অভাবে ঝুঁকিতেই থেকে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ”।
সবকিছু ধোয়াসা রেখেই পুঁজিবাজারে লেনদেন চলমান রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থা চলতে থাকলে একটা সময় পুঁজি হারাতে পারেন ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা, এমনটাই ধারনা করছেন বিশ্লেষকরা।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
অনিয়মে ডুবছে ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স https://corporatesangbad.com/12010/ |