বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে অনেক আগেই। এবার সে তালিকায় আরো এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ক্রয়ক্ষমতার সামর্থ্যরে (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) মানদন্ডে বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি হারের বিচারে বাংলাদেশ চলতি বছরের দ্রুততম প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য অবশ্যই এটি একটি আনন্দের সংবাদ।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭.১ শতাংশ। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে, যা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার রাষ্ট্রীয় তৎপরতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। অর্থাৎ, বাংলাদেশ অনেকটাই তার কাক্সিক্ষত লক্ষে এগিয়ে চলছে। যদিও চলার পথে অনেক সমস্যাও আছে, সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তার মাঝেও এভাবে এগিয়ে যাওয়াটা বিষ্ময়কর মনে হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে অনেক সম্ভাবনাময়ী দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্স বাংলাদেশকে পরবর্তী ১১ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর একটি বলে আসছে।
বাংলাদেশের এ রকম প্রবৃদ্ধির পেছনে অবদান রাখছেন গার্মেন্টস শিল্পের উদ্যোক্তা, মালিক, শ্রমিকসহ শ্রমিকেরা। দেশের মোট জিডিপির ১৩ শতাংশ এখন গার্মেন্টস শিল্পের। গত ১৬ বছরে ব্যাংক রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৩০ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৬ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এ বিশাল আকারের রিজার্ভের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা। এ ছাড়াও দেশের কৃষকদের অবদানের স্বীকার্য্য। তাদের পরিশ্রমে দেশে যথেষ্ট খাদ্যের যোগান হয়েছে এবং অর্থনীতিও হয়েছে শক্তিশালী।
বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৪৫ বছর। স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছে। দারিদ্রতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সবকিছুতেই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এখন সেখান থেকে এ রকম উন্নতি সত্যিকার অর্থে আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রায়ই বিভিন্ন পরিকল্পনা বিলম্বিত হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যে এখনো খুব ভাল অবস্থানে রয়েছে তা বলা যায় না। এর কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বলতে আমরা দৃঢ় রাষ্ট্রীয় শাষণ ব্যবস্থাকে বুঝি যেখানে দলমত নির্বিশেষে সবার আস্থা রয়েছে। দেশে এখনো প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এ ছাড়াও জঙ্গিবাদ নামক নতুন সমস্যা নিয়েও আছে বিশেষ উদ্বেগ। যদিও সরকার এ ব্যাপারে বেশ কঠোরতাই অবলম্বন করছে। এ দিকে বাংলাদেশের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ, জনসংখ্যাজনিত সমস্যা, অবকাঠামোগতও কিছু পরিবর্তনসহ আরো অনেক কিছু। এসবের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও উদ্যোগ কতখানি তা নিয়ে বরাবরই সংশয় রয়েছে বিশ্বের অনেক গবেষণা সংস্থার।
দেশ এগিয়ে যাবার বিষয়টি আমাদেরকে আশাবাদী করে। কিন্তু তাই বলে চলমান সমস্যার সমাধানে কার্যত কোন উদ্যোগ নেয়া হবে না এরকমটি আমরা কখনই দেখতে চাই না। এ ব্যাপারে সরকারকেও যেমন এগিয়ে আসতে হবে তেমনি দেশের জনগণ হিসেবেও আমাদের সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সামনের যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান উন্নয়নের আনন্দ নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কারণ সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে না পারলে সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। দেশের বর্তমান প্রবৃদ্ধিতে সরকাররেরও অবদান আছে। এখন সরকারসহ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলো যদি রাজনৈতিক মতভেদের উর্ধ্বে গিয়ে দেশের জন্য একত্রিত হয়ে পারস্পারিক সহযোগিতা করে তাহলে এক্ষেত্রে আমরা সকলেই সফল হতে পারবো। দেশ এগিয়ে যাওয়া মানে আমাদের এগিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ তার সামনের দিনগুলোতে আরো উন্নয়নের ও সফলতার পথে এগিয়ে যাক এটি আমাদের প্রত্যাশা।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তী উল্লেখিত প্রবৃদ্ধি অর্জন https://corporatesangbad.com/11397/ |