চিকিৎসা খরচ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মৃতের লাশ জিম্মি করে টাকা আদায় করা চলবে না। এই মর্মে নির্দেশ জারি করেছেন উচ্চ আদালতের বিচারক সৈয়দ মুহাম্মদ দস্তগীর ও আতাউর রহমান খান। সোমবার বিচারপতিদ্বয় এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পতি করে রায় প্রদান করেন। রায়ে গরিব এবং অসচ্ছল ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য একটা তহবিল গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য সচিব ও অধিদফতরের মহাপরিচালককে। এ ছাড়া এই নির্দেশনামা প্রজ্ঞাপন আকারে সব হাসপাতালে প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। ‘নবজাতকের লাশ ফেলে রেখে চলে গেলেন বাবা-মা’ এরকম একটা খবর ছাপা হয়েছিল একটা জাতীয় দৈনিকে ৫ বছর আগে। চিকিৎসার ব্যয় পরিশোধ না করতে পারায় ও নবজাতকের লাশ আটক রেখে ছিল মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই মর্মস্পর্শী সংবাদটা যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউমেন রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১২ সালে জুনে উচ্চ আদালতে রিট করে। দীর্ঘ শুনানির পর উচ্চ আদালত রিটটির মীমাংসা করে এই রায় দেন। নিঃসন্দেহে এই রায় যথাযথ এবং এই রায় যাতে প্রতিপালিত হয় সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। গরিব ও অসচ্ছল পরিবারগুলো এর নির্মম শিকার। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চরম অব্যবস্থাপনা চলছে। সেখানে দালাল চক্র সক্রিয়। যে সব সেবা বিনা পয়সায় পাওয়ার কথা, তা পেতে টাকা খরচ করতে হয়। বিশেষ করে গরিবদের। বেসরকারি হাসপাতালগুলো চরম মুনাফামুখী। সেখানে টাকা ছাড়া কোনো কথা নেই। রোগী ভর্তি করতে হলে আগেই একটা মোটা অঙ্কের টাকা ক্যাশে জমা করতে হয়। টাকা ছাড়া মরণাপন্ন রোগীকেও ভর্তি করা হয় না। এর পর চিকিৎসায় বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত টাকা জমা হয় রোগীর বাকির খাতায়। অভিযোগ আছে হাসপাতাল থেকে যে ওষুধ দেয়া হয় তার দাম ধরা হয় নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশি। ফলে রোগী যখন সুস্থ হয়, অথবা মারা যায় তখন একটা বিরাট বিল ধরিয়ে দেয়া হয় রোগীর স্বজনদের হাতে। ঘটিবাঁটি বিক্রি করে হলেও ওই টাকা পরিশোধ করে রোগী অথবা লাশ মুক্ত করতে হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষের যে মৌলিক চাহিদা তা পূরণ করার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে বলা হয়েছে। মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রে খাওয়া ও পড়ার পরেই চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল সৃষ্টি হয়েছে মুনাফার জন্য। মুনাফা তারা করবে এটা ঠিক। তবে তাদের কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকবে না, এটা হতে পারে না। সরকার দেশের বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য নিয়ম করেছে তাদের মুনাফার একটা অংশ সামাজিক দায়বদ্ধ পাত্রে জমা করতে হবে। সরকার হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের জন্যে তাদের মুনাফার একটা অংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা ফাে জমা করার আইন করা উচিত। যে ফা থেকে তারা গরিব ও অসচ্ছল রোগীদের দার দেনা মেটাবেন। আমরা হিউম্যান রাইটস ও পিস ফর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো এই মর্মে একটা রিট করুন। দেশের মানুষকে চিকিৎসা বঞ্চিত রেখে কোন উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
আদালতের আদেশ মেনে চলুন https://corporatesangbad.com/113077/ |