৬ মাসে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি

Posted on February 6, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হওয়ায় বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম ৬ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে যার পরিমাণ ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৩ হাজার ৮১৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৫৮৩ কোটি ডলারের পণ্য। এতে ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স ধরার পরেও চলতি খাতে বড় ঘাটতি থেকে যায়। মূলত বড় বাণিজ্য ঘাটতির কারণে চলতি খাতে ঘাটতি হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অর্থায়নের খাতটি। সেখানেও এখন ১০০ কোটি ডলারের বেশি ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ আমরা বাহির থেকে যে টাকা পাচ্ছি তার চেয়ে পরিশোধ করার পরিমাণ বেশি হয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতির সঙ্গে যোগ হয়েছে আর্থিক খাতের ঘাটতি। যেহেতু আমরা রেটগুলো ক্যাপ করে দিয়েছি সেহেতু রিজার্ভের উপর চাপ আসছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি ৭১৬ কোটি ডলারের। এই ঘাটতি বাজারে ডলারের চাহিদা ও যোগানের পরিমাণ নির্দেশ করে। ডলারের চাহিদার তুলনায় যোগানের ঘাটতি হচ্ছে ৭১৬ কোটি ডলার।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ঘাটতির এই অর্থ রিজার্ভ দিয়ে পূরণ করতে হবে। যা বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে করেছে। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রিজার্ভ আরও কমে যাচ্ছে। বর্তমানের চেয়ে রিজার্ভ আরও কমে গেলে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া প্রাকৃতিক বা কোনো বৈশ্বিক দুর্যোগ এলে এই ঝুকি আরও বেড়ে যেতে পারে। গত বছরের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। কমার কারণ হলো আমদানি কমেছে। আমদানি কমার ক্ষেত্রে একটি উভয় সংকটের বিষয় আছে। আমদানি কমার কারনে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের উৎপাদন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব পড়বে। ডলারের দর নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার থাকেনা। একইসঙ্গে কমছে রিজার্ভের পরিমাণ। তাই আমদানি কমানো ছাড়া তাদের কোন উপায় নেই। রপ্তানি আগের তুলনায় বাড়ছে। এরপরেও বাণিজ্য ঘাটতি বড় অঙ্কের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সেবাখাতে দেশ আয় করেছে ৪৫৫ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবাখাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৬৫০ কোটি ডলার। এতে সেবা খাতের ঘাটতি দাড়িয়েছে ১৯৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৬৮ কোটি ডলার।

যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। তবে বাংলাদেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে এ ঘাটতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৫২৭ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ৮২৯ কোটি ডলার। এদিকে ডিসেম্বর শেষে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি ৭১৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ১৭৯ কোটি ডলার।

তবে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৩২ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ২৬২ কোটি ডলারে উঠেছে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে এবং আরও কমবে। ডলার না পাওয়ার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। তবে বাংলাদেশে বড় আকারের ঘাটতি সবসময় থাকে। তবে আমাদের সমস্যা হলো বাণিজ্য ঘাটতি কমার পরেও পেমেন্টস অনেক বেশি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি কমেনি। গত মাসেও প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ কমেছে। অন্যদিকে ফাইন্যান্সিয়াল একাউন্টে আমরা পজিটিভ ছিলাম। তবে বর্তমানে এই হিসাবটিও ঋণাত্মক। তাই ফাইন্যান্সিয়াল হিসাবকে চাঙ্গা করতে কাজ করতে হবে। যাতে বিদেশিরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ। প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ওই বছর। তার আগে ৯.২৭ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩.১৭ বিলিয়ন ডলার।